প্রফেশনাল জীবনে কোনো শর্টকাট নেই

 




একটি বিষয় আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে জীবনে শর্টকাট বলে কিছু নেই। কাঙ্ক্ষিত সফলতা নির্ভর করে নিজের পরিশ্রমের ওপর। যেমন পরিশ্রম তেমন ফলাফল। কেউ অন্যের জন্য করে দেয় না। সবারই নিজের জন্য করতে হয়। পরিশ্রমকে মানুষ সব সময় ভয় পায়।


কারণ, পরিশ্রমের সঙ্গে আরেকটি বিষয় আছে যেটা মানুষের পরিশ্রমকে অর্থবহ করে তোলে। আর সেটি হলো ধৈর্য এবং পরিকল্পনা। ধৈর্যের সঙ্গে যদি সঠিক পরিকল্পনা করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সময় একটু লাগলেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসতে বাধ্য। অনেক সময় আমাদের সামনে হাতছানি দিয়ে শর্টকাট চলে আসে। তখন আমরা লোভ সংবরণ করতে না পেরে নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে সেই শর্টকাটকে বেছে নিই।


• একদিন কোন একটি প্রকল্পের জন্য অনেক রাত পর্যন্ত আমার এক সহকর্মী অফিসে কাজ করছিল। হঠাৎ বস চলে এলেন এবং বললেন তোমার অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, দেখি তোমার রুমের লাইট জ্বলছে তাই উপরে উঠে এলাম। অফিসে আমার ওই সহকর্মী আর আমাদের একজন অফিস সহকারী ছাড়া আর কেউ নেই। বস খুবই হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন এবং ওর সঙ্গে কথা বলছেন।


আমার ওই সহকর্মীকে জিজ্ঞেস করলেন কে কেমন কাজ করছে। এখন বর্তমান কর্মক্ষেত্রে দেখা যায় প্রায়ই এই ধরনের সিচুয়েশনে যিনি থাকেন তিনি তার গুণগান ছাড়া আর কিছুই করেন না। কিন্তু আমার ওই সহকর্মী নিজেরটা বাদ দিয়ে সত্যিকারের চিত্র তুলে ধরলেন এবং একদম নিজের প্রতি সৎ থেকে পুরো প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা বুঝিয়ে দিলেন। এখন আমি যেহেতু ওই প্রকল্পের প্রধান ছিলাম এবং যথারীতি আমার কানে চলে এলো।


• কর্মক্ষেত্রের প্রতি আপনি কতটা দায়িত্ববান সেটিও কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রায়ই একটু দেরি করে অফিস থেকে বের হই। একদিন সন্ধ্যায় সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখি আমার এক জুনিয়র সহকর্মী প্রত্যেকটি ডেস্কে গিয়ে কি যেন দেখছে। আমি ক্যামেরাটি একটু জুম করলাম।


দেখি সে চেক করছে কোনো পিসি/ল্যাপটপ চালু অবস্থায় আছে কিনা। তারপর সে ফ্রেশরুমের লাইট বন্ধ করল, এসিগুলো চালু ছিল সেগুলো বন্ধ করলা, তারপর বেরিয়ে গেল। আমার কাছে বিষয়টি খুব ভালো লাগল। এটিকে আমরা বলি দায়িত্ববোধ। কর্মক্ষেত্রকে নিজের মতো করে ভাবা।


• আরেক সহকর্মীর কথা বলি। একদিন আমার কাছে অনেকবার ফোন করেছে প্রায় আট থেকে নয়বার। যেহেতু আমি মিটিংয়ে ছিলাম তাই ফোন সাইলেন্ট করা ছিল। তারপর ফোন ব্যাক করলাম। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে? সে বলল স্যার অফিসের নতুন প্রজেক্টের জন্য এলইডি সাইনবোর্ড কিনতে বের হয়েছিলাম।


দামে একটু দ্বিধার মধ্যে ছিলাম। তাই আপনার পরামর্শের জন্য আপনাকে কল দিয়েছিলাম। তো কী করলেন শেষেঃ স্যার আমি পুরো মার্কেট যাচাই করে একটু রিস্ক নিয়ে কিনে ফেলেছি। পরে আমরা মিলিয়ে দেখি বাহ। একদম পারফেক্ট।


• বস হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শুধু কাজ দেওয়া আর ঠিক সময়ে বুঝে নেওয়া এমনটি কিন্তু নয়। সহকর্মীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছে কিনা, কাজটি করতে যে টুলস দেওয়া আছে সেটা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা ভালোভাবে চেক করে দেওয়া বসের অনেকগুলো নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে অন্যতম।


যেমন বস কাজ দিচ্ছে কিন্তু ভালো স্পিডের ধরা যাক ডেস্কটপ পিসিই দিল না। এখন সেই কর্মকর্তার কিন্তু মানসিক অবস্থা দিনকে দিন খারাপ হতে থাকবে এবং একটি সময় কর্মক্ষেত্র তার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবে না। এখন এই জায়গাটিতে দুইজনকেই দায়ী করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।


কারণ একজন খেয়াল রাখেনি আরেকজন বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাবার সর্বোচ্চ চেষ্টা না করেই হতাশ হয়ে রইল। দুজনের ইতিবাচকতার অভাবের কারণে দিন শেষে ক্ষতির সম্মুখীন হলো কর্মক্ষেত্র।


কর্মক্ষেত্রে কাজের ব্যাপারে সৎ থাকা, নিজের নৈতিকতা ঠিক রাখা অনেক বড় একটি ব্যাপার। সারা জীবন সততার ব্যাপারে কেউ হয়তো আপনার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলতে পারবে না কিন্তু আপনার ক্যারিয়ারে এমন একটি মোড় এলো যখন আপনাকে কথা বলতে হবে কিন্তু আপনি একটি বাক্যও ব্যবহার করলেন না।


যথারীতি কোনো এক সহকর্মীর ক্যারিয়ার ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেল। এর দায় কিন্তু আপনাকেও নিতে হবে। অতএব সততা মানেই শুধু আর্থিক বিষয় কিন্তু নয়। কাউকে কথা বলতে দিলেন না, এটাও সততার বিরোধিতা।


Post a Comment

Previous Post Next Post